ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। সাধারণত পেটের সমস্যা হলে আমরা ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকি। কিন্তু এটি খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সঠিকভাবে কার্যকারিতা পেতে হলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি কি?

আমরা সকলেই কমবেশি জানি যে ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা দূর করার জন্য খাওয়া হয়ে থাকে। যেহেতু সকলের এই সমস্যাটি থাকে না তাই সবাই ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জানে না। তাদের জন্য এই আর্টিকেলে প্রথমে আমরা ইসবগুলের ভুসি কি এরপরে কেন খাবেন এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইসবগুলের ভুসি বাইরের দেশে এটি সিলিয়াম নামে পরিচিত। এটি সাধারণত একটি সিড অর্থাৎ বীজ থেকে আসে এবং যেটি দুই ধরনের পাওয়া যেতে পারে। সাধারণত এটি ভুসি এবং পাউডার রূপে বাজারে পাওয়া যায়। আমরা আমাদের পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার দূর করার জন্য ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকি। সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজম না হওয়া।

ইসবগুলের ভুসি কেন খাবেন

ইসবগুলের ভুসির সাথে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জানার আগে কেন খাবেন? বিষয়টি জেনে নেব। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই জানি, রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হয়। আসলে কি তাই? এটির ব্যবহার কি শুধু কোষ্টকাঠিন্য নিরাময়? হালকা ধরনের কোষ্টকাঠিন্যে পানি, সবজি ও ফল খেলে ভালো হয়ে যায়।

ইসবগুলের ভুসি খেলে মলের পরিমাণ বাড়ে, মলের মধ্যে পানি ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। চিনি দিয়ে নাকি চিনি ছাড়া? ১-২ চা চামচ ২৫০ বা ১ গ্লাস পানি দিয়ে মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন। পানির সঙ্গে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খাবেন যাতে শরীরের ভেতরে ঢুকে এটি ফোলে। চিনি মেশানোর দরকার নেই।

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএসে যেখানে কোষ্টকাঠিন্য প্রধান্য পায় সেখানেও ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যায়। হেমোরেয়ডস, এনাল ফিশার বা পাইলস বা অর্শ রোগের ব্যথা কমাতে এটি সাহায্য করে। বিশেষ করে কষা পায়খানা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভুসি খাওয়া হয়ে থাকে। ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি ১ গ্লাস ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে খেতে পারেন।

খাওয়ার পর পেট-বুক জ্বালাপোড়া করা ও পেটে গ্যাস হওয়া রিফ্লাক্স রোগের উপসর্গ। খাবারের পর পাকস্থলীর গায়ে এটি আবারণ সৃষ্টি করে। ফলে এসিড থেকে শরীরে ক্ষতি কম হয়। এই খাবারের ফলে শর্করা জাতীয় খাবার কম শোষিত হয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি পরোক্ষভাবে উপকার করে।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

আপনি যদি ইসবগুলের ভুসির সঠিক উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে আপনাকে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। কারণ সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে যদি না খেতে পারেন তাহলে এর উপকারিতা গুলো পাবেন না। তাহলে চলুন আপনার পেটের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য আপনি ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিন।

ইসবগুলের ভুসি অথবা পাউডার আপনি চাই খান না কেন এটি খাওয়ার পরিমাণ হবে পাঁচ থেকে দশ গ্রাম পর্যন্ত। সারাদিনে আপনি এক থেকে দুই চামচ খেতে পারেন সাধারণত ডাক্তার এটি পরামর্শ দিয়ে থাকে। ২ চামচ ইসবগুল ২৫০ মিলি কুসুম গরম পানির সঙ্গে ১ থেকে ২ চামচ লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে নাস্তার পরে খেলে শরীরের ওজন কমে যায়।

বড় এক গ্লাস পানির সঙ্গে খুব ভালো করে মিশিয়ে এটি খেতে হয়। পানির সাথে মেশানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে এটি খেতে হবে। পানির সাথে মিশিয়ে রেখে দেওয়া যাবে না। কারণ ইসবগুলের ভুসি পানির সাথে গিয়ে কিন্তু আপনার ইনটেস্টইনে অর্থাৎ পাকস্থলীতে গিয়ে কাজ করতে শুরু করে। তাই পানিতে ভিজার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে এটি খেয়ে ফেলতে হবে।

ইসবগুলের ভুসি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

আমরা অনেকেই ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা জানিনা যার ফলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকি। আপনি যদি ইসবগুলের ভুসি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা জেনে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারেন তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে। আপনাদের স্বাস্থ্যগত কথা চিন্তা করে ইসবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা গুলো উল্লেখ করা হলো।

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
  • পাতলা পায়খানা দূর করতে সাহায্য করে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে
  • আইবিএস চিকিৎসায় সহযোগিতা করে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার প্রধান কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। আমরা যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকি সাধারণত তারা ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকি। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

পাতলা পায়খানা দূর করতে সাহায্য করে - অনেক সময় আমাদের বাইরের খাওয়ার অথবা হজমের সমস্যার কারণে পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এ পাতলা পায়খানা দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পথ অবলম্বন করে থাকি। আপনি যদি পাতলা পায়খানা দূর করার জন্য ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে - আমরা জানি যে ডায়াবেটিস হলো একটি মরণব্যাধি রোগ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে এবং ওষুধ খায়। আপনি যদি সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এটি আপনার রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে - ইসবগুলের ভুসি রক্তের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অনেক সময় আমাদের রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বেড়ে যায় যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। আপনি যদি এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল গুলো কমাতে চান অথবা দূর করতে চান তাহলে ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন নিয়মিত।

আইবিএস চিকিৎসায় সহযোগিতা করে - আই বি এস চিকিৎসায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যায়। আপনারা যারা আই বি এস রোগে ভুগছেন সাধারণত তারা ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। যাদের পায়খানা কখনো কষা হয় আবার কখনো লুজ হয় সাধারণত তাদের জন্য কার্যকরী। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে - আপনাদের যাদের ওজন অত্যাধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে সাধারণত তারা ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুসির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আপনি যদি ওজনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে ইসবগুলের ভুসি খেতে শুরু করুন।

আমাদের শেষ কথাঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক গন আজকের এই আর্টিকেলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, ইসবগুলের ভুসি কি? ইসবগুলের ভুসি কেন খাবেন? ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, ইসবগুলের ভুসি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনার যদি পেটের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে উক্ত আর্টিকেলটি বিস্তারিতভাবে পড়ে নেবেন।

ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হবে সেটি জানার পর সেই নিয়ম অনুযায়ী খেলে আপনাকে এটি খেতে হবে। তাহলে আপনি স্বাস্থ্য গত দিক থেকে এর উপকারিতা গুলো পেয়ে যাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url