তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত পালন করার জন্য নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে চাই কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
কনটেন্ট সূচিপত্রঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
- মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
- তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ
- তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
- উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজ কি এ বিষয়ে আমাদের প্রথমে ধারণা নিতে হবে। এরপরে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানব। তাহাজ্জুদ অর্থ হলো ঘুম থেকে জাগা। তাহাজ্জুদ নামাজ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল সব নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সব থেকে বেশি এবং ফজিলতপূর্ণ। সাধারণত তাই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত।
আরো পড়ুনঃ মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুতের নামাজ বাদ দেননি। তবে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য এটা সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এই নামাজ আদায় করলে অশেষ নেকি পাওয়া যায় কিন্তু আদায় না করলে কোন ধরনের গুনাহ হবে না। তাহাজ্জুদের নামাজ একটি নফল ইবাদত।
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।" তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুতের মূল সময় মূলত রাত দুইটা থেকে শুরু হয়ে থাকে এবং ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বিতরের আগে তা করে নেওয়া জায়েজ রয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ
১। প্রথমে তাহাজ্জুতের নামাজের নিয়ত করে নেওয়া মনে মনে। কেউ যদি মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে চায় তাহলে কোন সমস্যা নেই।
২। তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধা।
৩। এরপরে ছানা পাঠ করতে হবে।
৪। সূরা ফাতেহা পড়া।
৫। সূরা ফাতেহার সাথে একটি সূরা মিলিয়ে অর্থাৎ কেরাত পাঠ করা।
৬। এরপর অন্যান্য নামাজের মতো করেই রুকু সেজদা করা।
৭। একইভাবে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করে তাশাহুদ দুরুদ ও দোয়া মাছুরা পাঠ করে সালাম ফেরাতে হবে এভাবে নামাজ সম্পন্ন হবে।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
পুরুষ এবং মহিলারা উভয়ই তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলাদের নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সাধারণত যেভাবে পুরুষেরা নামাজ আদায় করে ঠিক সেভাবে মহিলাদের নামাজ হয়ে থাকে। সাধারণত অনেক মহিলা রয়েছে যারা মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই।
তাহাজ্জুদের নামাজ একটা গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহতালার কাছে দোয়া করতেন। তাহাজ্জুদের নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই তাহাজ্জুদের নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে হবে তার জন্য এর নিয়ম জানার জরুরী।
তাহাজ্জুতের নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। দুই রাকাত করে আপনি যত ইচ্ছা তত রাকাত নামাজ আদায় করতে পারবেন। যদি এশার নামাজ পড়ে বিতের নামাজ পড়ে থাকেন তবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পরে বিতর নামাজ পড়ার দরকার নেই। তখন দুই রাকাত থেকে শুরু করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেই হবে। আশা করি মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত? এ বিষয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করে থাকে তাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত? এ বিষয়টি জানা জরুরী। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা এবং দোয়া চাইতেন।
রাসুলুল্লাহ সাঃ তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো চার রাকাত, কখনো আট রাকাত আবার কখনো ১২ রাকাত নামাজ পড়েছেন। কিন্তু কেউ যদি দুই রাকাত আদায় করে তাহলেও তার তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় হবে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেছেন, " যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।"
আরো পড়ুনঃ রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ৮ টি ইবাদাত - রোজার ইবাদতের ফজিলত
দুই রাকাত দুই রাকাত করে আপনার ইচ্ছামত আপনি নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু দুই রাকাত দুই রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা সব থেকে উত্তম। অনেকে আছে বিতরের নামাজ বাকি রেখে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এরপরে বেতের নামাজ পড়ে। এক্ষেত্রে আপনি আগে বিতরের নামাজ পড়ে এরপরে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করতে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
আপনি কি তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করতে চান? সাধারণত তাই তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কোনটি দিয়ে পড়বেন এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন? যেহেতু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি নামাজ তাই যারা প্রথমবারের মতো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে তারা তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা সম্পর্কে জানতে চাই।
এক্ষেত্রে আপনি যে কোন সূরা দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত পরিবেশে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করা উত্তম। এক্ষেত্রে আপনি কেরাত উঁচু আওয়াজে অথবা নিচু আওয়াজে উভয়ে পড়তে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ - তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত - তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ দেখে অনেকে আছে এটি মুখস্ত করে থাকে সাধারণত তারা এ বিষয়টি জানতে চাই। সাধারণত তাই তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। যে কোন নামাজের নিয়ত করা এটি একটি অন্তরের বিষয়। অনেকে মনে করে থাকেন নিয়ত আরবিতে করতে হবে এবং উচ্চারণ করে করতে হবে।
আসলে বিষয়টা এমন নয় এক্ষেত্রে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত জেনে রাখতে পারেন কিন্তু অন্তরের কাজ হচ্ছে নিয়ত। আপনি অন্তরে অর্থাৎ মনে মনে নিয়ত করবেন তাহলেই যথেষ্ট। এখন আপনাদের সুবিধার্থে তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত উল্লেখ করা হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণঃ
আরবিঃ نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাআতাই সালাতিত তাহাজ্জতিই মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবর।
বাংলা অর্থঃ মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করছি।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
উপরের আলোচনা থেকে আমরা তাহাজ্জত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল? এ বিষয়টি অনেকেই জানার আগ্রহ থাকে। যেহেতু আমাদের প্রিয় নবী সাঃ তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করেছে তাই অনেকেই মনে করে এটি সুন্নত নামাজ। এই কথাটি একদিক থেকে মানা যায়।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যে কোন আমল আল্লাহর বান্দা গণ অনুসরণ করলে সেটা সুন্নাহ। আর ফরজ নামাজ ছাড়া যত ইবাদত রয়েছে সবই নফল ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া যত নামাজ আছে সব নফল বা অতিরিক্ত সুতরাং নফল সালাত হুকুমের মধ্যে আসেনি। সুন্নাহকে ওলামায়ে কেরাম হুকুমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নত হল দুই প্রকার। একটা হলো সেই সুন্নাহ যার উপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। আরেকটা হলো অতিরিক্ত সুন্নাহ হিসেবে যে সুন্নাহ প্রমাণিত হয়েছে। তাহাজ্জুদ এই পর্যায়ের সালাত। তাহাজ্জুদ সালাত নফল ওই দিক থেকে যেহেতু এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আর যদি বিবেচনা করা হয় এটা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আদায় করেছে তাহলে এটি সুন্নত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়তঃ উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত? তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনার রক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসের রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জানুন
আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url