ফজরের নামাজের শেষ সময়
ফজরের নামাজের শেষ সময় অনেকে জানতে চাই। আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি আল্লাহ তা'আলা ইবাদত পালন করার জন্য তার মধ্যে অন্যতম হলো ফজরের নামাজ। যদি ফজরের নামাজের শেষ সময় জানা থাকে তাহলে যদি জামাতের সাথে নামাজ পড়তে দেরি হয় তাহলে ফজরের নামাজের শেষ সময় এর আগে ফজরের নামাজ আদায় করে নিতে পারব।
তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট ফজরের নামাজের শেষ সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্রঃ ফজরের নামাজের শেষ সময়
- ফজরের নামাজ পড়ার ফজিলত
- ফজরের নামাজ পড়ার পুরস্কার
- ফজরের নামাজের শেষ সময়
- ফজরের নামাজ আদায় করার গুরুত্ব
- আমাদের শেষ কথা
ফজরের নামাজ পড়ার ফজিলত
মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উপর আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছে। একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার জন্য আমরা নামাজ আদায় করি। নামাজ হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ অন্যতম। ফজরের নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। আমরা ফজরের নামাজের শেষ সময় এর সাথে এর ফজিলত সম্পর্কে জানব।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আল্লাহতালা বিশেষ ফজিলত দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফজরের নামাজ। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, "নামাজ কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং কায়েম করো ফজরের নামাজ। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজ উপস্থিতির সময়।"{সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৭৮}
নামাজের মধ্যে যেমন ফজরের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব তেমন সময়ের মধ্যে ফজরের সময় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ফজর নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন। এই সূরাতে প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "শপথ ফজরের।" {সূরা ফজরঃ ১} হাদীস শরীফে ফজরের নামাজের বিশেষ তাগিদ রয়েছে।
জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।"{মুসলিমঃ ৬৫৭} অন্য আরও একটি হাদিসে ফজরের নামাজ আদায়কারীদের জান্নাতি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি দুইটি শীতল সময়ে নামাজ আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"{বুখারী ও মুসলিম} উপরে উল্লেখ করা হাদিসগুলো থেকে আমরা এটাই স্পষ্ট ভাবে জানতে পারি যে ফজরের নামাজের গুরুত্ব কত বেশি।
ফজরের নামাজ পড়ার পুরস্কার
কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি আল্লাহতালার এবাদত পালন করার জন্য এবং আল্লাহ তালাকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য ফজরের নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ফজরের নামাজ পড়ার পুরস্কার দেবেন। যেহেতু এই আর্টিকেলে আমরা ফজরের নামাজের শেষ সময় সম্পর্কে আলোচনা করছি তার আগে ফজরের নামাজ পড়ার পুরস্কার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১। ফজরের নামাজ দাঁড়িয়ে পড়লে সারারাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। হাদিসে বর্ণিত, 'যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন সম্পূর্ণ রাত জেগে নামাজ পড়লো।'{মুসলিম}
২। যে ব্যক্তি দুই শীতল সময়ে নামাজ পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুইটি শীতল সময় হলো ফজর এবং আসর।
৩। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে সাধারণত সে আল্লাহ তায়ালার জিম্মায় থাকবে।
৪। ফজরের নামাজ পড়লে রিজিকে বরকত আসবে। সকালবেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাধা দেয় কেননা তখন রিজিক বন্টন করা হয়।
৫। ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে। যারা রাতের অন্ধকারে মসজিদের দিকে হাটে তাদেরকে কিয়ামতের দিন সম্পন্ন নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
৬। ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করলে দিনটি বরকতময় হয়। আল্লাহতালার রহমত পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। আমাদের প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন, "হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য, তার সকালবেলায় বরকত দান করুন।"{তিরমিজি}
৭। ফজরের নামাজ আদায় করলে দুনিয়া আখিরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে। ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্য যা কিছু আছে সব কিছু চাইতে শ্রেষ্ঠ।
ফজরের নামাজের শেষ সময়
ফজরের নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মুসলিমের কাছে। কারণ ফজরের নামাজ আদায়কারীকে আমাদের প্রিয় নবী সাঃ জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন। যদিও আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ভোরে ওঠে ফজরের নামাজ আদায় করতে পারে না। আবার অনেকে ফজরের নামাজের শেষ সময় সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেনা।
সাধারণত আমাদের দিন এবং রাতের পরিমাপ সবসময় এক থাকে না। এটি পরিবর্তনশীল অনেক সময় দিন বড় থাকে এবং রাত ছোট থাকে এবং বিভিন্ন সময় রাত বড় থাকে এবং দিন ছোট থাকে সাধারণত এই সময় নামাজের সময়সূচির পরিবর্তন হয় বিশেষ করে ফজরের নামাজের। এখন যেহেতু রাত ছোট এবং দিন বড় তাই এখন ফজরের নামাজের সময় শুরু হয় ৩.৫০ মিনিটে এবং ফজরের নামাজের অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্তের শেষ সময় হলো ৫.১৮ মিনিট{এ সময় পরিবর্তনশীল}।
সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফজর নামাজের সময়সূচী শুরু হয়। ফজর নামাজ পড়তে হয় সূর্য ওঠার আগে পর্যন্ত। সুবহে সাদিক হল শেষ রাতের পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখার আভাস দেখা যায় তা। তা দেখা যাওয়ার পর থেকে সূর্য উঠার বেশ কয়েক মিনিট অর্থাৎ ২০-২২ মিনিট আগে ফজরের নামাজ পড়া শেষ করতে হবে।
ফজরের নামাজ আদায় করার গুরুত্ব
আমরা ইতিমধ্যে ফজরের নামাজের শেষ সময় এর সাথে ফজরের নামাজ আদায় করার ফজিলত এবং পুরস্কার সম্পর্কে জেনেছি। যেহেতু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ করা হয়েছে তাই ফজরের নামাজ আমাদের জন্য আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ফজরের নামাজ আদায় করার গুরুত্ব সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে জেনে নিন।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয়, তবে তার সব আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সব আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। {তাবরানিঃ ১৯২৯}
নামাজ এমন এক ইবাদত, যা সারা বছর দৈনিক পাঁচ বার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যুশয্যায় স্বাভাবিক জ্ঞান থাকা অবস্থায় নামাজ থেকে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই।
ফজরের নামাজে দাঁড়ানো সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। হাদিসে হজরত উসমান ইবনে আফফান রাঃ থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করলো সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো।" {সহিহ মুসলিমঃ ১০৯৬}
জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতপ্রাপ্তির সুসংবাদ। হজরত আবু যুহাইর উমারা ইবনে রুয়াইবা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করবে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। {সহিহ মুসলিমঃ ৬৩৪}
কিয়ামতের দিন সরাসরি আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য লাভ। আর এটি হচ্ছে সর্বোত্তম পুরস্কার। হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজলি রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা হজরত রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন! নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে যেমন স্পষ্ট ওই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছো।
তাকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার আগের নামাজ ও সূর্য ডুবার আগের নামাজ আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই করো। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, "সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবিহ পাঠ করুন।" {সহিহ বোখারিঃ ৫৭৩}
আমাদের শেষ কথাঃ ফজরের নামাজের শেষ সময়
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে ফজরের নামাজ পড়ার ফজিলত, ফজরের নামাজ পড়ার পুরস্কার, ফজরের নামাজের শেষ সময়, ফজরের নামাজ আদায় করার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফজরের নামাজ পড়া গুরুত্ব রয়েছে তাই আমাদের সকলকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
এতক্ষণ অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আপনার উক্ত বিষয়গুলো জানা উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url