আরাফার দিনের আমল - আরাফার রোজার ফজিলত ২০২৪
সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর একটা বিশেষ দিন হল আরাফার দিন। এই দিনটিকে ‘ইয়াওমু আরাফা’ বলা হয়ে থাকে। এই দিনের একটা বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। এজন্য মুসলমানদের উচিত এই দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা ও সে অনুযায়ী আমল করা। আজকে আমরা আরাফার দিনের আমল সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করব।
- আরাফার দিন কবে-২০২৩
- আরাফার দিন হাজীদের করণীয়
- আরাফার দিনের আমল
- আরাফার রোজা কয়টি
- আরাফার রোজার ফজিলত
- আরাফার দিনের দোয়া
- শেষ কথাঃ আরাফার দিনের আমল
আরাফার দিন কবে-২০২৪
আরাফার দিন কবে-এটা নিয়ে অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা সৃষ্টি হয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও সময় তারতম্য জন্য এটা হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ যে দেশে যবে জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ পড়বে, সেই দিনটি সেখানে আরাফার দিন।সেই হিসেবে বাংলাদেশে আরাফার দিন হলো ১৫ই জুন ২০২৪।
আরাফার দিন হাজীদের করণীয়
মক্কায় অবস্থানরত হাজিরা ৮ই জিলহজ থেকে এহরাম অবস্থায় মিনাই অবস্থান করেন। অনেকে ৭ ই জিলহজ এর রাতে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। হাজীদেরকে হজের অন্যান্য বিধি-বিধান ও আহকাম গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ৮ই জিলহজ্জ হাজিরা সারাদিন মিনার প্রান্তরে অবস্থান করেন।
আর ৯ই জিলহজ্জ ফজরের নামাজ শেষে এবং সূর্য উদয়ের পর তালবিয়া পড়তে পড়তে হাজীরা আরাফার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
তালবিয়া হলোঃ
'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,
লাব্বাইকা লা শারিকালাকা লাব্বাইক,
ইন্নাল হামদা, ওয়ানন মাতা, লাকা ওয়াল মুলক,
লা শারিকা লাক।'
আরাফার ময়দানে অবস্থান হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল। হাজীদের ক্ষেত্রে আরাফা ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে রোজা রাখার বিধান নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এরও আরাফায় অবস্থানকালীন রোজা না রাখার বর্ণনা বিশুদ্ধ হাদিসে খুঁজে পাওয়া যায় (বুখারি, হাদিস )।
আরাফা অবস্থানকালীন সময়ে আপনাকে তালবিয়া, জিকির, দরুদ শরীফ ও দোয়া ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটাতে হবে। কোনরকম দুনিয়াবী খোঁজ গল্প অথবা বাক-বিতণ্ডা করা যাবে না। আর বেশি বেশি কান্নাকাটি করে দোয়া করা উত্তম। আরাফার ময়দান দোয়া কবুলের উত্তম স্থান। তাই আসরের নামাজের পর হাজীদেরকে কান্নারত অবস্থায় আকুতি মিনতি করে দোয়া করতে আরাফার মাঠে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। সূর্যাস্তের পূর্বে কোনভাবেই আরাফার ময়দান ত্যাগ করা যাবে না। সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।
হাদিসের বর্ণনায় রয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসামানের অধিবাসী অর্থাৎ ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন। বলেন, দেখ তোমরা- আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোয় মলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আজাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মত আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান)
আরাফার দিনের আমল
হাদিসে এসেছে যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিন হল আরাফার দিন। আর শ্রেষ্ঠ রাত্রি হল লাইলাতুল কদরের রাত।
তাই এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য ও মহিমা রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম, হাদিস)।
সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ এই দিনটিকে ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে কাটিয়ে দিয়ে থাকেন। তাই আমাদের উচিত এই দিনে ভালো আমল করা এবং রোজা রাখা। যারা হাজী নন তাদের জন্য এই রোজা রাখা সুন্নত।
আরো পড়ুনঃ কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
আরাফার রোজা কয়টি
আরাফার রোজা নিয়ে অনেকে ভিন্ন মতামত করে থাকেন। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে এটাই পাওয়া যায় যে আরাফার রোজা মূলত ৯ই জিলহজ্জ। হাদিসে এসেছে যে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এজন্য অনেকেই জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিন রোজা রাখেন। আবার অনেকে দুই দিন অথবা তিনদিন রোজা রাখেন। যেহেতু এটা নফল রোজা তাই বেশি বেশি সওয়াবের আশায় আপনিও বেশি রোজা রাখতে পারেন।
আরাফার রোজার ফজিলত
আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত অপরিসীম। আরাফার দিনের রোজায় বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহকে ক্ষমা করিয়ে দেবে।’ (মুসলিম, হাদিস)
এজন্য সকল মুমিন বান্দার উচিত আরাফাত দিনের রোজা পালন করা। কোনভাবেই এর সোয়াব থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করা এবং পরিবারের সকলকে এ বিষয়ে অবগত করা।
আরাফার দিনের দোয়া
আরাফার দিনের দোয়া কে শ্রেষ্ঠ দোয়া হিসেবে নবীজি আখ্যায়িত করেছেন। আরাফার দিনের বিশেষ দোয়া হল, 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির’।
যার অর্থ হল, 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।' তাই আপনি যেখানেই অবস্থান করুন না কেন উপরের দোয়াটি পাঠ করতে পারেন।
উপরোক্ত দোয়া ছাড়াও নিম্নের তাসবীহ পাঠ করতে পারেন।
' সুবহানাল্লাহি হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার- লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'
এই দিনে বেশি বেশি তাসবীহ তাহলিল ও দরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত। এরপর কান্নাকাটি করে দোয়া করা ও আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া উত্তম।
আরো পড়ুনঃ ঈদের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস ২০২৩
শেষ কথাঃ আরাফার দিনের আমল
এই আর্টিকেলে আরাফার দিনের আমল ও আরাফার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, আপনি আরাফার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। তাই আরাফার দিন উপস্থিত হলে বেশি বেশি সওয়াবের আশায় উপরুক্ত আমলগুলো করার চেষ্টা করুন এবং পরিবারের সবাইকে পালন করার জন্য উপদেশ দিন। আরাফার দিনে রোজা পালন করতে ভুলবেন না।আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url