ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম

ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম নিচে তুলে ধরা হবে। তাই আপনি যদি ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগের সহিত পড়তে থাকুন। চলুন দেখে নেই, ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম।

পেজ সূচিপত্র: ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম

ভূমিকা

ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী বিবাহ করার বিশেষ নিয়ম কানুন রয়েছে। আপনি যদি শরীয়ত সম্মত ভাবে বিবাহ করতে চান, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সেই নিয়ম কানুন গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এই আর্টিকেলটিতে ইসলামী শরীয়ত অনুসারে বিবাহের নিয়ম নীতি সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। 

ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম

ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিবাহের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এই নিয়ম অনুসরণ না করলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। নিচে বিয়ে করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো যদি আপনি মনোযোগের সাথে পড়েন তাহলে বিবাহ করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। আসুন দেখে নেয়া যাক, ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম। 

বিয়ের রুকন সমূহ: বিয়ের নির্দিষ্ট কিছু রুকন অর্থাৎ অবশ্য পালনীয় বিষয় রয়েছে, যেগুলো সম্পাদন না করলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। বিয়ের তিনটি রুকন রয়েছে। সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। 
  • বর-কনে উভয়ে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া: অর্থাৎ বর এবং কনেকে বিবাহের উপযুক্ত হতে হবে। বর এবং কনে উভয়কেই মুসলমান হতে হবে। মাহরাম হওয়া যাবে না ইত্যাদি। অর্থাৎ সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। 
  • ইজাব বা প্রস্তাবনা: কন্যার পক্ষ থেকে বরের নিকটে প্রস্তাবনা পেশ করতে হবে। এ প্রস্তাবনা পেশ করবেন কন্যার অভিভাবক। 
  • কবুল বা গ্রহণ করা: কন্যার পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। এই প্রস্তাব গ্রহণ না করলে বিবাহ সম্পন্ন হবে না। কেননা বিবাহের ক্ষেত্রে প্রস্তাব পেশ করাটা যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি গ্রহণ করাটাও জরুরী বিষয়। 
বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত সমূহ: ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম অনুসারে  বিয়ের শুদ্ধ হওয়ার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্তগুলোও যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। বিয়ের শর্ত সমূহ যথাযথভাবে পূরণ না করলে বিবাহ অবৈধ বলে গণ্য হবে। তাই অবশ্যই আপনাকে বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত সমূহ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। 
  • বর এবং কনেকে নির্দিষ্ট করা: বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত হলো বর এবং কন্যাকে আলাদা আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট করতে হবে। অর্থাৎ বরকে তার পুরো পরিচয় উল্লেখ করতে হবে এবং কন্যার পুরো পরিচয় উল্লেখ করতে হবে। যেন সেই পরিচয় এর ভিত্তিতে বর এবং কনেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। অর্থাৎ পরিচয় এমন ভাবে তুলে ধরতে হবে যেন অন্য কারো সাথে তা মিশ্রিত না হয়। আর এ কারণেই কন্যার নাম, তার পিতার নাম, তার পিতার কততম সন্তান সে বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। 
  • বর এবং কনে উভয়ের সম্মতি থাকা: বিয়ের ক্ষেত্রে বর এবং কনের উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে। কনের সম্মতি গ্রহণ করার পরে কনের অভিভাবক বরের নিকটে প্রস্তাব পেশ করবেন। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করলেই তা বরের সম্মতি হিসেবে পরিগণিত হবে। আর এভাবেই বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। উভয়ের সম্মতি গ্রহণ না করলে বিবাহ বৈধ হবে না। 
  • মেয়ের বৈধ অভিভাবক কর্তৃক বিয়ের আকদ সম্পন্ন করা: বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মেয়ের বৈধ অভিভাবক কর্তৃক আকদ সম্পন্ন হতে হবে। মেয়ের বৈধ অভিভাবক কর্তৃক সম্পন্ন না হলে বিবাহ বৈধ বলে গণ্য হবে না। এই প্রসঙ্গে হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা:) বলেন: "অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।" (তিরমিজি)
  • বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী থাকা: বিয়ে বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষী ব্যতীত কখনোই বিয়ে বৈধ হবে না। বিবাহ বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন পড়ে। আর যদি নারী সাক্ষী থাকে সেক্ষেত্রে একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষীর প্রয়োজন হবে। এই ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়, "তারা হলো ব্যভিচারিনী যারা সাক্ষী ছাড়া নিজেরাই নিজেদের বিবাহ করে নেয়।" (তিরমিজি)
  • বিয়ে প্রচার করা: বিয়ে প্রচার করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ প্রচার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর এ কারণেই অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া পালিয়ে বিবাহ করা বৈধ নয়। তাই অবশ্যই আপনাকে বিবাহ যথাসাধ্য প্রচার করতে হবে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা:) বলেন: "(বিয়েতে) দফ বাজানো ও ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে হালাল ও হারামের পার্থক্য।" ( তিরমিজি)

ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া

ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম ইতোমধ্যে উপরে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া তুলে ধরা হলো। ইসলামিক নিয়ম অনুসারে বিবাহের খুতবার রয়েছে। 

অর্থাৎ বিবাহ সম্পন্ন করার পরে খুতবা পাঠ করতে হয়। আর খুতবা পাঠ করেই হলো বিয়ে পড়ানোর দোয়া। তবে আপনি যদি নবদম্পতিকে দেখতে যান বা নবদম্পত্তির জন্য দোয়া করতে চান সেক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত দোয়া পড়তে পারেন। 

দোয়া: بارَكَ اللّهُ لَك، وَبارَكَ عَلَـيْك، وَجَمَعَ بَيْـنَكُما في خَـيْر

বাংলা উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খাইরিন।

অর্থ: আল্লাহ আপনাকে আশীর্বাদ করুক, এবং আপনার ওপর তার বরকত বর্ষণ করুক, এবং আপনাকে কল্যাণের সাথে যুক্ত করুক। (আবু দাউদ) ।

বিবাহের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয়

ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। কেননা ইসলামিক রীতিতে বিবাহ করা নিয়ম ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবাহের ক্ষেত্রে বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয় রয়েছে। 

সে বিষয়গুলো অবশ্যই আপনাকে মেনে চলতে হবে। কেননা আপনি যদি বিবাহের ক্ষেত্রে করণীয় এবং বর্জনীয় গুলো যথাযথভাবে মেনে না চলেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু গুনাহগার হতে হবে এমনকি বড় ধরনের ভুল করে ফেলে বিবাহ বাতিল হয়ে যেতে পারে। 

তাই অবশ্যই আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। যাই হোক নিচে, বিবাহের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় কাজ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো। আশা করি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো জেনে উপকৃত হতে পারবেন। 
  • অপচয় রোধ করা। 
  • পাত্র বা পাত্রী নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাকওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া। 
  • শাওয়াল মাসের জুমার দিনে বিবাহ সম্পাদন করা। তবে যে কোনদিন বিবাহ করা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই। 
  • বিবাহ প্রচার করা। 
  • বাসর রাতে এই দোয়া পাঠ করা: اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْألُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَخَيْرِ مَا جَبَلْتَ عَلَيْهِ . وأعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَ عَلَيْهِ.
  • অলিমা খাওয়ানো। 
  • কনের পিতার উপর চাপ সৃষ্টি না করা। 
  • ওলিমার মজলিসে উপঢৌকন গ্রহণ না করা। 
  • সাধ্য অনুসারে মহরানা নির্ধারণ করা। 
  • স্ত্রী সহবাসের সময় এই দোয়া পাঠ করা: بِسْمِ اللّهِ اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطانَ مَا رَزَقْتَنَا.

শেষ কথা

ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম-কানুন সমূহ সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আপনি যদি ইসলামিক নিয়মে বিবাহ সম্পন্ন করতে চান সে ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত বিবাহের পদ্ধতি আপনাকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। 

উপরে বর্ণিত বিবাহের পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করলে সঠিক নিয়মে বিবাহ সম্পন্ন করতে পারবেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি উপরে উল্লেখিত ইসলামিক নিয়মে বিয়ে করার নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ না করেন, তাহলে কিন্তু বিবাহ বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাকে বিবাহের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪